আমের মুকুল ঝরে পড়া রোধে কার্যকর টিপস ও সমাধান
আম আমাদের জাতীয় ফলের একটি গৌরবময় পরিচয় বহন করে। শুধু স্বাদে নয়, অর্থনীতিতেও আমের গুরুত্ব অনেক। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে আম গাছে ফুল আসে, যাকে আমরা “মুকুল” বলে জানি। এই মুকুল থেকেই পরে আমের গুটি, এবং শেষমেশ রসাল আম হয়।
কিন্তু অনেক কৃষক ও গার্ডেনারের মুখে একটা অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়—"গাছে মুকুল এসেছে, কিন্তু তা ঝরে পড়েছে"। এতে ফলন কমে যায়, আয়-রোজগারে প্রভাব পড়ে। তাই মুকুল ঝরে যাওয়ার কারণ জানা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া খুব জরুরি।
আম গাছে মুকুল আসা মানেই আশার আলো — ভালো ফলনের সম্ভাবনা। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, গাছে মুকুল এলেও কিছুদিন পর তা ঝরে পড়ে। এটি চাষিদের জন্য হতাশার কারণ। তবে চিন্তার কিছু নেই, কারণ কিছু সহজ কৌশল ও বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে মুকুল ঝরে পড়া রোধ করা সম্ভব।
আমের মুকুল ঝরে পড়ার কারণ একাধিক। প্রতিটি কারণে ভিন্ন ভিন্ন সমাধান প্রয়োজন। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
ঠান্ডা বাতাস ও ঘন কুয়াশা মুকুলকে দুর্বল করে তোলে।
কালবৈশাখী ঝড় বা অকাল বৃষ্টিতে মুকুল ভেঙে পড়ে।
খুব বেশি শুষ্ক ও গরম আবহাওয়াও মুকুল শুকিয়ে দেয়।
মুকুলে থ্রিপস, এফিড ও মাকড়সা জাতীয় পোকা আক্রমণ করে।
এরা মুকুলের রস শুষে নেয়, ফলে ফুল শুকিয়ে পড়ে।
অ্যানথ্রাকনোজ ও পাউডারি মিলডিউ ছত্রাক মুকুলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
এটি মুকুলের কোষ ধ্বংস করে এবং তা ঝরিয়ে দেয়।
বোরন, জিংক, ফসফরাস ও পটাশিয়ামের ঘাটতি থাকলে গাছ মুকুল ধরে রাখতে পারে না।
কিছু গাছে অতিরিক্ত মুকুল হয়, যেগুলো ধরে রাখার মতো যথেষ্ট পুষ্টি বা শক্তি থাকে না।
সঠিক সময়ে গাছ ছাঁটাই না হলে গাছ দুর্বল থাকে, রোগ ছড়ায়, এবং মুকুল ঝরে পড়ে।
কুয়াশা হলে সকালবেলা গাছের নিচে আগুন জ্বালিয়ে ধোঁয়া দিন।
ঝড় বা বৃষ্টির আগে গাছকে বাঁধাই করে শক্ত করুন।
মুকুল আসার পর ১০-১৫ দিন পর পর কীটনাশক স্প্রে করুন:
ইমিডাক্লোপ্রিড (০.৫ মি.লি./লিটার)
থায়ামেথক্সাম, নিম তেল স্প্রে
জৈব উপায়ে নিম বীজ ভিজিয়ে ছেঁকে স্প্রে করতে পারেন।
প্রতি ৭-১০ দিন পর পর ছত্রাকনাশক স্প্রে করুন:
কপার অক্সিক্লোরাইড (৩ গ্রাম/লিটার)
ম্যানকোজেব (২.৫ গ্রাম/লিটার)
ছত্রাকের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নিন।
বোরন ও জিংক স্প্রে করুন:
বোরিক এসিড ১ গ্রাম/লিটার
জিংক সালফেট ১ গ্রাম/লিটার
মাটিতে প্রয়োগ:
প্রতি গাছে ১ কেজি টিএসপি, ৫০০ গ্রাম এমওপি, ২০০ গ্রাম বোরন মিশিয়ে দিন।
অক্টোবর-নভেম্বরে গাছ ছাঁটাই করুন।
গাছের নিচে আগাছা পরিষ্কার রাখুন।
রোগগ্রস্ত ডালপালা কেটে ফেলুন।
অতিরিক্ত মুকুল থাকলে কিছু নিজ হাতে সরিয়ে ফেলুন।
এতে বাকি মুকুল বেশি শক্তিশালী হয়ে আমে পরিণত হয়।
✅ গাছে মুকুল আসার আগে রোগ ও পোকা দমন করা সবচেয়ে ভালো কৌশল।
✅ সন্ধ্যায় স্প্রে করলে কার্যকারিতা বেশি হয় (তাপমাত্রা কম থাকে)।
✅ সার প্রয়োগের সময় গাছে পানি দেওয়া কমিয়ে দিন।
✅ প্রতি বছর মাটির pH পরীক্ষা করে সারের ডোজ ঠিক করুন।
✅প্রাকৃতিক জৈব সার ও কম্পোস্ট ব্যবহার মুকুলের স্থায়িত্ব বাড়ায়।
উত্তর: দ্রুত ছত্রাক ও পোকা দমন স্প্রে করুন। বোরন ও জিংকের স্প্রে দিন। মুকুল পাতলা করে ফেলুন। প্রয়োজনে স্থানীয় কৃষি অফিসারের পরামর্শ নিন।
উত্তর: ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় প্রতি ৭-১০ দিনে মুকুল পর্যবেক্ষণ ও স্প্রে করতে হবে।
উত্তর: বৃষ্টির পরপরই ছত্রাকনাশক স্প্রে করুন এবং গাছের নিচে পানি জমতে দেবেন না।
উত্তর: অ্যানথ্রাকনোজ এবং পাউডারি মিলডিউ—দুটি সবচেয়ে সাধারণ ছত্রাক যা মুকুলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
উত্তর: না। নিয়মিত ছাঁটাই না করলে গাছ দুর্বল হয় এবং রোগ-ব্যাধির ঝুঁকি বাড়ে, যা মুকুল ঝরার অন্যতম কারণ।
আমের মুকুল ঝরে যাওয়া নিরাশাজনক হলেও প্রতিকার সম্ভব। পরিকল্পিত পরিচর্যা, সঠিক সময়ে সঠিক স্প্রে, পুষ্টি ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশ বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিলে আপনি নিশ্চয়ই আপনার গাছ থেকে পর্যাপ্ত আম পাবেন।
সুস্থ মুকুল মানেই সুস্বাদু আম। তাই আগে থেকেই প্রস্তুতি নিন, সমস্যা প্রতিরোধ করুন।
✅ এই পোস্টটি যদি আপনার উপকারে আসে, শেয়ার করুন ও কমেন্টে জানিয়ে দিন আপনি কোন এলাকায় আম চাষ করেন। ?
SEO Keywords (Meta):
আমের মুকুল ঝরে পড়া | আম গাছের মুকুল রক্ষা | মুকুল ঝরার কারণ | আমের পোকা দমন | আমের ছত্রাক প্রতিকার | mango blossom drop in Bangladesh